উত্তর কানপুর দেশপ্রাণ সংঘ ও পাঠাগার

সাম্য-মৈত্রী-ঐক্য-প্রগতি - এই চারটি মূলমন্ত্রের সংযুক্তি ও যথার্থতা পালনের দ্বারা নিরবিচ্ছিন্ন ও উন্নততর সমাজ গড়ার পীঠস্থান আমাদের উত্তর কানপুর দেশপ্রাণ সংঘ ও পাঠাগার। স্বাধীনচেতা ও দেশপ্রাণ বীরেন্দ্র নাথ শাসমলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, কোন অশুভ শক্তির কাছে মাথা নত না করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্দেশ্যে মাথায়, বুকে ধরে আমাদের পথ চলা ও পা ফেলা। নেতাজি সুভাষচন্দ্রের মতো তীব্র জেহাদ মনে। কবির ভাষায় "আমি ভয় করবোনা ভয় করবোনা, দু'বেলা মরার আগে মরবো না"।

আমরা রূপায়িত করেছি নানান কর্মসূচি যেমন - আর্ত পীড়িত মানুষের জন্য রক্তদান, বস্ত্রদান, আর্থিক সহায়তা দান, শরীর চর্চার ব্যবস্থা, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দানের জন্য কৃতী ছাত্র-ছাত্রী সম্বর্ধনার ব্যবস্থা, প্রতি বছর গ্রামীণ মেলার ব্যবস্থা এবং গ্রামীণ পাঠাগারের ব্যবস্থা অন্যতম কর্মসূচি। গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের পঠনপাঠনের সুবিধা রয়েছে কোচিং সেন্টারের।

এই সংঘের প্রতিষ্ঠাতাগণ মাঠ থেকে মাটি বয়ে এনে সংঘের জায়গায় মাটি ভরাট করে, লোকেদের জমিতে ঠিকায় ধান কেটে বা রোপণ করে অর্থ সংগ্রহ করে সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। অনেক ধৈর্য্য, পরিকল্পনা, স্বপ্ন, ঘাত-প্রতিঘাতের ফসল এই সংঘ।

আজ থেকে ২৪ বছর আগে সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্রতী হতে চেয়ে একটা সুন্দর বাসস্থানের অভাবের মধ্যেই হন্যে হয়ে অন্বেষণ করতে করতে এই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় (দানী স্কুল) - এর প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকমন্ডলীর সাহচর্যে ও সহযোগিতায় তাঁদেরই বিদ্যালয়ের একটি অব্যবহৃত শ্রেণীকক্ষকে সাময়িক ভাবে ঐ বাসস্থান রূপে ব্যবহৃত হয়। বছর তিনেক ধরে, ঐ বিদ্যালয় কক্ষে সদস্যরা নাটকের মহড়া নিয়ে অনেক জায়গায় নাটক পরিবেশন করে। তারপর অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সংঘ স্থানান্তরিত করা হয় বিদ্যালয়ের অপর প্রান্তে। মাননীয় প্রাক্তন শিক্ষক শ্রীযুক্ত উপেন্দ্রনাথ প্রধান মহাশয়ের একফালি জায়গায়। এই ভাবে চলতে চলতে নানান গ্রামের মানুষের দ্বারস্থ হয়ে তাঁদের সাহায্য, সহানুভূতি ও সহযোগিতা নিয়ে চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ হয়।

এই সংঘে খেলাধুলা, শরীর চর্চা, নাচ-গান, নাটক-যাত্রা, গীতিনাট্য, কবিগান, বাউল গান, রক্তদান, বস্ত্রদান, চক্ষু ও দন্ত চিকিৎসা, মেডিক্যাল ক্যাম্প, বৃক্ষরোপণ, অন্নমহোৎসব ছাড়াও মুমূর্ষু রোগী বা দুঃস্থ ঘরের বিবাহযোগ্যা কন্যার বিয়েতে আর্থিক সাহায্য প্রভৃতি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

উত্তর কানপুর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো সেই জীর্ণ ছাদ ছিলো অনেক কৈশোর ও যৌবনের বিনোদন স্থল।

আমাদের এই সংঘ ১৯৯৪ সালে S/77181 নম্বরে সরকারীভাবে রেজিস্ট্রিকৃত হয়েছিল। পরবর্তীকালে পূর্ণচন্দ্র মাইতির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সদস্যগণের সহযোগিতায় নতুনভাবে রেজিষ্ট্রি হয় S/IL/56298 এই নম্বরে।

আগে সরস্বতী পূজায় শুধু প্রসাদ বিতরণ হতো, পরবর্তীতে পরিকল্পনা করে খিচুড়ি প্রসাদ, নিরামিষ ভাত বিতরণ করা হয়, যা পরে মহোৎসবে রূপান্তরিত হয়।